top of page

শান্তিরামটোলা আশ্রমের ঋষিরা এবং ভক্তদের কথা

May 11, 2024

8 min read

1

7

শান্তিরামটোলা শ্রীশ্রী দরিদ্র নারায়ণ আশ্রম হল একটি অদ্ভুত জগতের অজানা গভীরতা, যেখানে মানুষ প্রকৃতির সহিত এক হয়ে ওঠে। আশ্রমের ঋষিরা এবং তাদের ভক্তদের প্রতিদিনের জীবন, মেধা, ধ্যান এবং ভাবনা একটি অদ্ভুত ভাবে মিশে যায়।



আশ্রমের ভক্তদের দৈনন্দিন দিনচর্যায় ধ্যানের অনুশীলন করে, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টা করে এবং পর্বত ও নদীর কাছে ভ্রমণে হারিয়ে যায়। ঋষিরা এবং ভক্তদের পরস্পরের সাথে অলৌকিক পরিবেশে বাস করে। ভক্তদের কাছে ঋষিরা উপকারী, শান্তিপূর্ণ আত্মা। তারা না কেবল ভক্তদের শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক সমৃদ্ধির দিকে থাকে, বরং সমস্ত মানবতার জন্য উৎসাহী হতে বিশেষ বিশেষ কাজ করে।জনপ্রিয় শ্রেণীতে এই সাধু-সন্ন্যাসীদের থেকে প্রাপ্তব্য বোধ হয়। বিধাতার সন্ধানে দরিদ্র নারায়ণ আশ্রম একটি অনন্য স্থান যেখানে আপনি মানব বস্তু না হয়ে পথ পেতে পারেন। সকলের প্রতি শান্তি ও ভালোবাসা জানাই, আলোর পথ প্রদর্শন করুক।


ওম শান্তি

সংঘ গুরু চন্দ্রনাথের যোগীর জীবনী:-


   বর্তমান উত্তরবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট মহকুমা ভুক্ত,বাউল জগন্নাথ বাটী গ্রামে এক পন্ডিত যোগীবংশে চন্দ্রনাথের জন্ম । পিতা কমলাকান্ত নাথ, ঐ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত গৃহস্থ ও পরোপকারী ধর্মপরায়ণ সাত্ত্বিক ব্যক্তি। মাতা এককড়ি দেবী, চন্দ্রনাথ তাঁদের আদরের ধন। চন্দ্রনাথের জন্ম ইংরেজি 1919 সালের কার্ত্তিক মাসের রাস পূর্ণিমাই তিনি শেষ রাত্রিতে, দিন রবিবার । ছোট বেলা থেকেই চন্দ্র নাথের বনে জঙ্গলে ঘুরে বেরানো অভ্যাস; তাই তাঁর ডাক নাম হয় জংলু । বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে। শিক্ষকতা করেন। আদর্শবাদী শিক্ষাকতার জন্য চারিদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতা সংগ্রামে রাজনীতিতে যুক্ত । অহিংসা সত্যাবৃতী আন্দোলন । গরীব দুঃখীদের সেবা ভার গ্রহণ করে। ব্রিটিশ শাসনের সময়। মহাত্মাগান্ধীজীর অহিংসার পূজারী। ডাঃ বিধান চান্দ্র রায়। স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত থাকায় বহুবার কারাবাস হয়। সহপাঠী অনেকের শহিদ হয়েছেন। পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট মহকুমা প্রেসিডেন্ট পদে থাকায় ঐ সর্ব অঞ্চলে গরীব দুঃখীদের সেবা কার্য্যে ব্রতী থাকেন। কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে যারা স্বার্থপর নেতা তারা ভাবল যে চন্দ্রনাথ যোগী President থাকলে সকলে স্বার্থন্বেষী কংগ্রেসী অর্থের লুট করা সম্ভব হবে না।


চন্দ্রনাথ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেন। দৈববাণীতে জানতে পারলেন। তারপর তিনি সকলে শিক্ষকতা রাজনীতি পরিত্যাগ করে। রাতারাতি বহুদূরে পার পতিরামে আত্রেয়ী। সেখানে করি শুরুর নদীর ধারে আশ্রয় গ্রহণ করেন।


চন্দ্রনাথ যোগী আশ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন, মানব মানবী প্রকৃত স্বাধীনতা কিভাবে লাভ করতে পারে। এই কাজের জন্য অসীম শক্তি দরকার সে শক্তি সাধারন শক্তি নয়, প্রয়োজন ঐশ্বরীক শক্তির তাই শুরু হল তার যোগ সাধনা বাংলা ১৩৫০ সালে।


  চন্দ্রনাথ গৃহ ত্যাগ করে নানা তীর্থ পরিক্রমার পর স্থায়ী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করলেন।  পঃ দিনাজপুরের  আত্রেয়ী নদী তীরে পার পরিরামের বনে। তার কথার যোগ সাধনায় অক্লান্ত চেষ্টার ফলে পরম শক্তির সঙ্গে যুক্ত হওয়া সম্ভব হল ১৩৭৩ সালের ৩১ শে শ্রাবণ। কিন্তু পিতা  শ্রীশ্রী দরিদ্র নারায়ণ পুনঃ পৃথিবী পৃষ্ঠে শিলারূপে প্রকাশ। "গোধুলী লগ্নে" ধরণীর ভার লাঘব করার জন্য সত্য কালের অর্থাৎ বৈদিক যুগের বৈদিক । যোগ এবং যজ্ঞের মাধ্যমে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আত্ম ওত্ত্ব  ব্রহ্মবিদ্যা প্রসারের জন্য ঈশ্বর পিতা কর্তৃক নির্বাচিত হন। গীতার যোগ সাধনার মধ্য দিয়া মানব মানবী জীবনের আতম মুক্তির সরল রাজপথ । আধ্যাত্মিক পাতঞ্জল যোগ শাস্ত্রের "যোগবিভাস শ্বাসতত্ত্ব সাধনার মাধ্যমে মানব মানবী দেবশক্তি লাভে সক্ষম হয় ।

      তারপর পরমপিতার নির্দেশে শুরু হল তাঁর যোগশিক্ষা বিতরণ সর্ব সাধারণের মধ্যে পশ্চিম দিনাজপুর ও মালদহ ও জলপাইগুড়িতে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে। ঐ আশ্রমগুলি ভক্তদের দ্বারা পরিচালিত হয়। আশ্রমের পরিব্রাজক সন্ন্যাসীদের দ্বারা বিভিন্ন অঞ্চলে যোগ শিক্ষা বিতরিত হয়ে চলেছে। আশ্রমে শ্রীশ্রী দরিদ্র নারায়ণ বিগ্রহ। ধর্মচক্র সংঘ। এই সংঘের আচার্য্য, সহকারী আচার্য্য, উপাচার্য্য ও যাজক। যোগ ধর্মে দীক্ষিত হয়ে নারী ও পুরুষ মিলিয়ে শতাধিক সংসার ধর্মে ও সন্ন্যাস ধর্মত্যাগী দের দ্বারায় পরিচালিত হয়। গৃহ ত্যাগী এবং আশ্রম বাসে তার আচার ব্যবহারের দ্বারা আস্থা অর্জন করতে হয়। তারপর তাকে যাজক আখ্যা দেওয়া হয়। যাজকের পরিধেয় বস্ত্র হয় সাদা মাথায় সাদা পাগড়ী। এই অবস্থা থেকে উত্তীর্ণ হলে উপনয়ণ দেওয়া হয়  এবং উপাচার্য্য আখ্যা দেওয়া। উপাচার্য্যের পরিধান মাথায় গেরুয়া পাগড়ী, অন্যান্য অংশে সাদা। উপাচার্য্য পদ থেকে সহআচার্য তারপর আচার্য্য পদে অভিষিক্ত হয়। আচার্য পদে অভিসিক্ত যারা সম্পূর্ণ গেরুয়া পরিধান হয়। আচার্য্য থাকা কালে প্রচারকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সংঘ গুরু চন্দ্রনাথ 'যোগী শিষ্যদের মধ্যে পদাসিক্ত করেন বৈদিক বিশ্ব শান্তি যজ্ঞের মাধ্যমে।


 প্রতিটি আশ্রমের দৈনন্দিন নিয়ম:-

চন্দ্রনাথ গুরুর আশ্রম বিদ্যালয়ে । জীবন রুটিন সেথা দেখিলাম গিয়ে।।

আশ্রমের কার্য্যসূচী দৈনদিন যাহা। সংক্ষেপে বর্ণনা তার লিখিলাম তাহা।।

বৈদিক নিয়ম যাহা শাস্ত্রে পাওয়া যায়। সেই নিয়ম আশ্রম বাসী পালন করয়।।

ব্রহ্মা নিশা যে সময় উপস্থিত হয়। গুরু তখন শঙ্খ ধ্বনি কাসর বাজায়।

আশ্রমবাসী জাগে তখন আপন শয্যায়। শয্যায় বসিয়া তারা বিভু গুনোগায়।।

সমস্বরে বিহু গান অতীব মধুর। যে মধু পানেতে তারা আনন্দে ভরপুর।।

তারপর যোগাসন করে কতক্ষণ। তারপর  বাহ্যক্রিয়া করে সম্পাদন।।

 দন্তভাবন স্রান সব সূর্য ওঠার আগে। করে তারা আশ্রামবাসী করে ক্ষিপ্র বেগে।।

তারপর ফুল তোলে কেহ লেপে ঘর। কেহ গাছে জল ঢালে কর্মেতে তৎপর।।

অনুমান ৮ ঘটি বেলার সময়। আরাধিত বিদ্রোহের পূজারতি হয়।।

মহানন্দে আশ্রামবাসী নৃত্য কীর্তন করে। তারপর যোগাসন করে নিষ্ঠা ভরে।

তারপর খিচুড়ি অন্য করিয়া ভোজন। গ্রামে গ্রামে যাই তারা প্রচার ও কারণ।।

দু এক জন থাকে আশ্রম পাহারার তরে। পুনরায় বিকালে তারা আশ্রমেতে ফিরে।।

হরিনামের নামের গুণে তারা ভিক্ষা যাহা পায়। তাহাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মহানন্দে খায়।।

বিকালে ফিরিয়া পুনঃ অতি সজাতনে। সন্ধ্যার যাবতীয় কাজ করে প্রাণপণে।।

ইষ্টদেবে মালা তারা পরাইবার তরে। মনোযোগে মালা গাঁথে আনন্দ অন্তরে।।

তারপর সন্ধ্যারতি জ্বালিয়ে দিয়া। সকলে যোগে বসে আসন্ করিয়া।।

অনুমান ১ ঘন্টা স্থির থাকে। তারপর স্ত্রোতপাঠ করে একে একে।।

তারপর সকলে মিলিত হইয়া। তত্ত্বকথা তত্ত্ব গানে উঠে মাতিয়া।।

তারপর তিনমুষ্টি চালের অন্ন খায়। সাধারণ বিছানা পেতে নির্ভয়ে ঘুমায়।।

দ্বন্দ্ব বিবাদ নাই সেথা কলহ কোনদল। সর্বদা তাদের মধ্যে আনন্দ হিল্লোল।।

গুরু শিষ্য মাখামাখি যেন এক প্রাণ। শিষ্যরা ভালোবাসে তার বাসার মতন।।

যে ভালবাসার মধ্যে বিন্দু ত্রুটি নাই। সেই প্রেম ভালবাসা আশ্রমেতে পাই।।

জীবন রুটিন সেথা যাহা দেখিলাম। সংক্ষেপে এই ছত্রে লিখে রাখিলাম।।

     

     তারপর গ্রাম কীর্তন প্রার্থনা তবস্তুতি যোগে পূজা শেষে রাত্রিকালীন আরতি। আরতি অন্তে দরিদ্র নারায়ণ বিগ্রহ অন্যান্য দেবদেবী ও পরিশেষে ইষ্ট প্রণামআন্তে ভোজন এবং রাত্রি এগারোটায় নিজ নিজ শয্যায় সায়ন। বালুরঘাট মালদা আশ্রমে চতুর মার্চ ও ব্রত মঞ্চ ৪ মাস ব্যাপী আশ্রম বাসী ছাড়াও চন্দ্রনাথ যোগীর যে লক্ষাধিক শীর্ষ শিষ্যরা আছে তাদেরও অন্ততপক্ষে দিনে রাতে দু'বার যোগাসনে এবং ধ্যান জপে নিমগ্ন থাকার নির্দেশ থাকে, আশ্রমের মূল বিগ্রহ দরিদ্র নারায়ণ মূর্তি এছাড়া শিবলিঙ্গ থাকে, বিভিন্ন অশ্রমে হিন্দু দেবদেবীর বিভিন্ন উৎসব ও পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈদিক বিশ্ব শান্তি যজ্ঞ হয়। দরিদ্র নারায়ণের সেবা হয়। যদি চন্দ্রনাথের শিষ্যদের মধ্যে মুসলমান, খ্রিস্টান সকলেই আছেন তথাপি শিশু শিক্ষা অগণিত থাকায় বা তাদের দ্বারা আশ্রম পরিচালিত হওয়ায় সেই উৎসব এই ঘটা করে হয়। এতে শিষ্যদের আগ্রহ ও অবদানই বেশি।

    যোগ প্রণালী- এই চন্দ্রনাথ যোগীর সাধনার মূল কথা নাড়ী সাধনা, মানবের বাহাত্তর হাজার নাড়ীর মধ্যে, তিন নাড়ী সর্বশ্রেষ্ঠ। ইহা নাড়ী, পিঙ্গলা নাড়ী, সুষমা নাড়ী। ইহা,পিঙ্গলা,সুষমা নাড়ী  পূরক, রেচক, কুম্ভক, প্রানাইম সাধন স্বরচক্র দ্বারা মানব দেহ গঠিত। ১) মূলাধার ২) সাধিষ্ঠান ৩) মনিপুর ৪) অনাহত, ৫)আজ্ঞাচক্র  ৬)সহস্রার। নাভি পদ্ম হতে নিম্নে পাতাল-তমগুন জাত। নাভি পদ্ম হতে উপরই কন্ঠে পর্যন্ত জগত - উহা রজগুন জাত। কণ্ঠ হতে মস্তকের উপরিভাগ পর্যন্ত উহা সতগুন জাত। পাতাল বাসী জীব কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য ইত্যাদি রিপুগণের । ফলে তাদের জ্ঞান পশুতুল্য। অন্ধকারে নিমজ্জমান। এরা তমগুন আচ্ছাদিত। 


      জগত বাসী জীব যোগ ভোগ দুই নিয়েই সংসার যাত্রা নির্বাহ করেন এবং যোগের ফলে শেষে ভোগ নাশ হয়ে মোঃক্ষের অধিকারী হয়। যেমন জনক, নেমি ইত্যাদি গন আর স্বর্গবাসী জীবগন চৈতন্য আত্মা । তারা জীবত অবস্থায মুক্তিলাভ করেন। তিনি স্থিতি প্রঞ্চ ব্যক্তি। তিনি সর্বদা নির্বিকার। তখন জাতিভেদ সম্পূর্ণ নাশ হয়ে হরিজন বলে আখ্যাত হয়। সর্ব জীবে তখন সমপ্রেম সমজ্ঞান হয়। সমস্ত সৃষ্টকেই বাসুদেব জ্ঞানে পূজা করেন।। তিমি তথা সুখ দুঃখের অতীত হন। তখনই আতমা মোক্ষের অধিকারী হয় এবং তাঁকে তখন স্বাকার ব্রহ্ম  বা ঈশ্বর বা অবতার জগতবাসী আখ্যা দেয়।"

    

    শিষ্যদের প্রতি সংঘ গুরু চন্দ্রনাম যোগী নির্দেশ বায়ুর সঙ্গে প্রেম কর। দেহের অভ্যন্তরস্থ বায়ুকে নিজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনো। বায়ু নিয়ন্ত্রণ হবে প্রাণায়াম দ্বারা গুরুর নির্দেশ যোগাসনে বসে মেরুদণ্ড ও মস্তক সরলরেখায় যথা সম্ভব উর্দ্ধে রেখে প্রাণায়ামের মাধ্যমে প্রান বায়ুকে আকর্ষন করতে হবে। প্রথমতঃ ইড়া-পিঙ্গলা ও পরে সুষমার মধ্যে প্রাণ বায়ু কে ঠিকভাবে প্রবাহিত করতে শিখতে হবে। তার পর পূরক (শ্বাস নেওয়া), কুম্ভক '(শ্বাস ধরে রাখা)' রেচকের (শ্বাস ছেড়ে দেওয়া) মাধ্যমে ধীরে ধীরে ফুল কণ্ডলিনী শক্তিকে জাগরিত করে উর্দ্ধগতি করতে হবে। এবং ধীরে ধীরে চক্রগুলি ভেদ করে একেবারে উর্দ্ধে চলে যেতে হবে। চক্র শীর্ষে পৌঁছলেই জীব শিবত্ব বা ঈশ্বরত্ব প্রাপ্ত হয়। এই প্রতিটি পদ্ধতি চলাকালীন গুরু প্রদত্ত বীজমন্ত্র স্মরণ রাখতে হয় অর্থাৎ ইষ্টমন্ত্র স্মরণে রেখে যোগাসন করতে হয়। এবং ঠিক ঠিক ভাবে এগোতে পারলে পরিশেষে শিষ্য নিজেই শিবত্ব প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ গুরুশিষ্য বা শিব-জীব এক হয়ে যায়। মানবের দেহ দশম দ্বার বিশিষ্ট। সাধমতত্ত্ব খুব সংক্ষেপে বলা হলো। তবে যোগসাধনের অক্ষম হলেও মন ও প্রাণ ঢেলে পবিত্র ভাবে যদি একাধারে ঈশ্বর চিন্তায় কেউ লেগে থাকতে পারে, তাহলে ঈশ্বরত্ব প্রাপ্ত হওয়া যায়। বলে চন্দ্রনাথ যোগী গৃহী ভক্তদের, সেই পরামর্শ দেন। সংঘ গুরু ছন্দ্রনাথ যোগী চতুরাশ্রমে ব্রহ্মচর্য্য শিক্ষা বাল্যকালে। গ্রাহহু, বাণপ্রস্থ ও সন্ন্যাস ধর্ম। বৈদিক কালে বালক ও বালিকা আনন্দপূর্ণ জীবন, দেহ অবসানে, মোক্ষ লাভ করিয়াছে।

    সংঘ গুরু চন্দ্রনাথ যোগী মানব জাতির কল্যানে বিভিন্ন জাগরণী সংগীত। দেশাত্মবোধক। স্বর্গীয় উপদেশামৃত বাণী। বিশ্বশান্তির উদেশ্য-যজ্ঞ, সব কিছুর কল্যাণ কামনা, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা এবং সর্বোপরি যা উল্লেখ্য তা হচ্ছে গুরু আশ্রমে সন্ন্যাসীনীদের অবস্থান। নারীদের এই ভাবে জাগরণে ভারতে বৈদিক রুপ প্রকাশিত হবে। সংঘগুরু চন্দ্রনাথ যোগী নবকালের নব ধর্ম প্রচারক, ধর্ম সংস্থাপক, সর্ব্বধর্ম সম্মনয় মিলম ক্ষেত্র, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানব ধর্মের গোড়া পত্তন, মূল ধর্মের উদ্ঘাটন করেছেন এই ধর্মচক্র সংঘ। প্রতিষ্ঠা করেছেন সংঘগুরু চন্দ্রনাম যোগী। নিজে আদর্শ চরিত্র গঠন করা, ব্রহ্ম রক্ষা করা, ঈশ্বরানুভূতি দর্শন করা - ইহাই অধ্যাত্ম দর্শন বা দর্শনশাস্ত্র। সু মানে সুন্দর, দর্শন মানে দেখা, তাই নারায়ণের হাতে সুদর্শন চক্র রয়েছে। সত্যম শিবম সুন্দরম শিব সত্য এবং সুন্দর। যত্র জীব তত্র শিব। এই মানুষের মধ্যেই পরমব্রহ্ম বিরাজমান, মানবজাতি সত্য সুন্দরের পথে বিরাজমান হলে, নিজেকে জানতে পারিলে, অধ্যাত্ম- আত্মতত্ত্ব ও যোগে মননিবেশ করিতে পারিলে, মানুষ প্রকৃত মানুষ হতে পারে। সেই মানুষ রূপে শ্রী ভগবান অবতীর্ণ হন। ইহাই সংঘগুরু চন্দ্রনাথের প্রকৃত উদ্দেশ্য বা প্রচার। ব্রহ্মসত্য জগত মিথ্যা। মনুষ্য জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ভোগ ও মোক্ষ লাভ করা।

    চন্দ্রনাথ যোগীর মতে, শিব নারায়ণ তাঁর কাছে অভিন্ন। এ সংসারে দীন-দুঃখী। তাদের তরন-তারনই তার কাজ। তাই তিমি দরিদ্র নারায়ণকে তার আশ্রমের মূল বিগ্রহ রুপে বেছে  নিয়েছেন - এতে কোন বিরোধ নেই। যোগী সম্প্রদায়াস্কৃতিতে বলা হয়েছে শিবের আদেশে নারায়ণের অবতার রুপে নয় জন নাথের আর্বিভাব হয়। তারা যথাক্রমে ১) কবি নারায়ণ, ২)করভাজন নারায়ণ, ৩)অন্তরীক্ষ নারায়ণ, ৪)প্রবুদ্ধ নারায়ণ, ৫)অবির্ষেত্রী নারায়ণ ৬)পিপলায়ণ নারায়ণ, ৭)চমস নারায়ণ, 8)হরি নারায়ণ ও ৯)দ্রমিল নারায়ণ। একালে চন্দ্রনাথ যোগী নারায়ণকে দরিদ্র নারায়ণ রুপে প্রতিষ্ঠিত করলেন। অন্যান্য নাথ সিদ্ধদের মতো চন্দ্রনাথ নিজের ও শিবকেই আদিনাথ বলেন। দরিদ্র নারায়ণ আশ্রমের সব রচনা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলা যাত্রা। সাধক ব্রহ্মানন্দের আশ্রম। পাগলের সত্য পরিচয়। আরও ধর্মীয় নাটক যাত্রাভিনায় লিখা আছে গুরু চন্দ্রনাথ যোগীর লেখা সংগীত।

সংগীত:-

১)চল চল চল তেড়ে মেরে চল বলসেবল অলৌকিক যোগ বল যতই যোগে এগিয়ে যাবে,                ততই দিব্য দর্শন পরে, ততই আত্মশক্তি প্রকাশিবে, দূরীভূত আত্মমল।।

যোগী যাহা করে পান, সবই হয় অমৃত সমান, যোগী করে নিশিদিন পান শুদ্ধ গঙ্গাজল।।

যোগে কর্ম যুক্ত হলে, ঈশ্বরীয় দুয়ার খোলে, যোগীগণ যোগ বলে, পায় অমৃত ফল।।

চন্দ্রনাথ কয় যোগ ধরিলে, পাপের বালাই যাইরে চলে যোগান্বিতে যাবে জ্বলে তখন হইবে নির্মল ॥

২) সত সঙ্গকর, সত্য গুরু ধর, অন্তে পাইবে চরম গতি।

সত, আলোচনা কর সত্য বাক্য ধরো সত কর্মে দাও মতি ।।

সত আচারী হও, সত, ভাবে যাও, সত, কর্মে অর্থ বিলাও,

পাবে না জীবনে দূরগতি ।। সৎ ভাবে আয়, সৎ ভাবে ব্যয়,

সৎ কর্মে যায়। সৎ আর্দশ নেয় গুরু চন্দ্রনাথ সৎ শিক্ষা দেয়

 যাহে জীবের হয় সুমতি।।

৩) গুরুর কাছে সাধন জেনে- বসগে গিয়ে গঙ্গার কুলে।

ভবরোগে মুক্ত হবি রে, শ্রী গুরুর চরণ ধোয়ালে।।

অজপা নাম কর সাধনা, জানবি যদি মুল ঠিকানা,

ওরে সাধন বিনে সিদ্ধি হয়না, বৃথা বসে ভাং খেলে।।

ত্রি বেনীতে কর যোগের স্নান, স্নানে আতমা পায় পরিত্রাণ;

গুরু চন্দ্রনাথ কয় আত্মার সন্ধান বসিয়া সঙ্গম স্থলে ॥



৪) 'রে তোর মাংস দেহের তত্ত্ব ছেড়ে - আত্মার খবর কর।

যতই করো দেহের তত্ত, এ দেহ নশ্বররে এ দেহ নশ্বর।।

হাওয়ারুপী ভগবান, হাওয়ায় আসেন হাওয়ায় যান,

ঐ হাওয়ার মাঝে যার অধিষ্ঠাণ, তিনি সর্বদা অবিনশ্বর।।

তোমার বামে ব্রহ্মা সৃষ্টিকারী, দক্ষিনে শিব ত্রিশুল ধারী।

তার মাঝে বিষ্ণু পালনকারী অভ্যাস যোগে তাকে ধর।।

মাংস দেহের হবে অবসান, রবে আতমা রুপী ভগবান,

কর্মযোগী লভে সে ধন, লভে, যৌগিক পথে পরমেশ্বর।।

সঙ্কীর্ণ এক গোলীপথে, আত্মা থাকেন ঐ পথের সাথে,

ঐ পথে আস্তে আস্তে এ গিয়ে ধরে যোগিবর।।

ঐ হাওয়ার মধ্যে বেদের সার, সর্ব্বব্যক্ত সে মূলধার

মূল মুনিকোঠা যাহার আধার তিনি স্থুল বুদ্ধির অবোচর ৷৷


May 11, 2024

8 min read

1

7

bottom of page